দীর্ঘ দেড় মাস বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় চারণ ভূমির গো-খাদ্য ও বাড়িতে থাকা সঞ্চিত গবাদি পশুর খাবার সম্পুর্ণরুপে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিজেদের খাবারের পাশাপাশি তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ও প্রধানতম সম্পদ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অববাহিকার সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
সরকারি হিসাবে এসব এলাকার ৬০ হাজার গরুসহ প্রায় লক্ষাধিক মহিষ, ভেড়া, ছাগল ও ২ লক্ষাধিক হাস-মুরগী বন্যার কবলে পড়ে। বন্যার সময়টাতে শুধু প্রাণি সম্পদের ক্ষতি হয় ৩০ লাখ টাকা। পানি নেমে গেলেও জেলার ৪ শতাধিক চরাঞ্চলের ১ হাজার ৪৬৬ একর চারণ ভূমিসহ বাড়িতে সঞ্চিত গবাদি পশুর খাবার সম্পুর্ণরুপে নষ্ট হয়ে যায়।
এ অবস্থায় টানা বন্যার পরবর্তী এ সময়টাতে চরাঞ্চলের কর্মহীন মানুষজন নিজেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গবাদি পশু খাবার জোটাতে না পাড়ায় মহাবিপাকে পড়েছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটার চরের শমসের আলী মুন্সী বলেন, ‘ছোট বড় মিলে আমার ১২টি গরু রয়েছে। এবারের দীর্ঘ বন্যায় গরুর খাবারসহ সবকিছু পচে গেছে। সামান্য কিছু খর বাঁশের মাচার উপর রেখেছিলাম। তাও শেষ হয়ে গেছে। এখন এই গরুর খাবার জোটানো নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
একই ইউনিয়নের চর বড়ুয়ার মঈনুদ্দিন বলেন, ‘আমার ৩টি গরু নিয়ে খুব কষ্টে পড়েছি। সরকারিভাবে ফিড দেয়া হলেও আমি পাইনি। ধারদেনা করে বাজার থেকে ফিড কিনে এনে গরুকে খাওয়াচ্ছি।’
উলিপুর উপজেলার সাহেবের আগলা ইউনিয়নের কালু মিয়া জানান, দীর্ঘ বন্যায় চরের সব ঘাসসহ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। নিজেদেরই খাবার নেই তার ওপর গরুর খাবার জোটানোটা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার ছোট ছোট ১শ খড়ের আটির দাম ৯শ টাকা। এই গরু কিভাবে রক্ষা করবো জানা নেই।
চরবাসীর অভিযোগ, চরাঞ্চলগুলোতে সরকারিভাবে গো-খাদ্য বিতরণ করা হলেও বেশিরভাগ গবাদি পশুর মালিকের ভাগ্যে জুটছে না। কেউ কেউ ধার দেনা করে বাজার থেকে চরা দামে খাদ্য কোন রকমে বাঁচিয়ে রাখছেন তাদের গৃহপালিত পশু পাখিদের।
তবে বন্যা কবলিত এলাকায় গবাদি পশুর মালিকদের মাঝে গো-খাদ্য বিতরণসহ নানা প্রনোদনার মাধ্যমে সহায়তার কথা জানান জেলার অতিরিক্ত প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মকবুল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ গবাদি পশু ও দুই লাখ হাস-মুরগী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি এবং তা গো খাদ্য হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।’
এরপরও বন্যা পরবর্তী সময়টাতে এই গবাদি পশুর যাতে কোন ক্ষতি না হয় এ জন্য সরকার থেকে প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। একমাসের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের মোবাইল একাউন্ডের মাধ্যমে এই প্রনোদনার টাকা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।